জাতিসংঘের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এখনো বিশ্বে প্রায় একশো কোটি মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, যার ফলে কলেরা, ডায়ারিয়া এবং হেপাটাইটিসের মতো প্রাণঘাতী রোগের বিস্তার ঘটছে।
রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এতে বলা হয়, উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ভারতেই, যেখানে এখনো প্রায় ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ শৌচাগারের পরিবর্তে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে থাকেন।
ভারত সরকার শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা নির্মাণ করলেও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই বিপুল অর্থের অনেকটাই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়নি, বরং এটি বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে খরচ হয়েছে যার ফলাফল তেমন ইতিবাচক হয়নি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অভ্যাস দূর করতে সফলতা অর্জন করেছে বলে প্রশংসা জানানো হয়েছে। নব্বই দশকে যেখানে এই দুই দেশে প্রতি তিন জনের একজন উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতেন, সেখানে ২০১২ সাল নাগাদ এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
ইউনিসেফের স্যানিটেশন বিশেষজ্ঞ রলফ লায়েনডিক বলেন, “বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট ব্যবস্থার প্রসারে সফল একটি কৌশল অনুসরণ করেছে, যেখানে ভারতের পদক্ষেপ ছিল দুর্বল এবং খামখেয়ালিপূর্ণ।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জনস্বাস্থ্য পরিচালক মারিয়া নিরা মন্তব্য করেন, “ভারতের বাস্তবতা এতটাই বৈপরীত্যপূর্ণ যে, একজন ব্যক্তি এক হাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন, আর অন্য হাতে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করছেন।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সাব-সাহারান আফ্রিকার ২৬টি দেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের হার এখনো বাড়ছে। এর মধ্যে নাইজেরিয়ার অবস্থা সবচেয়ে করুণ, যেখানে প্রায় ৪ কোটি মানুষ এখনো খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে।
জাতিসংঘ বলছে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন