বিয়ে: বন্ধন না ভাঙনের দ্বার?
এক সময় বিয়ে ছিল চিরস্থায়ী এক বন্ধন—ভালোবাসা, বিশ্বাস ও সহানুভূতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এক গভীর সম্পর্ক। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এ সম্পর্কটিও যেন হয়ে উঠছে ভঙ্গুর ও ঠুনকো। আজকাল সামান্য মতবিরোধেই অনেক দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে। পারস্পরিক সমঝোতার জায়গায় এসেছে জেদ, আত্মকেন্দ্রিকতা আর “আমার অবস্থান”-এর অবচেতন যুদ্ধ। ফলে একটি পবিত্র সম্পর্ক মুহূর্তেই ভেঙে পড়ছে।
আর যারা বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে পারছেন না বা হাঁটতে চান না, তাদের অনেককেই জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে পরকীয়ার মতো অনৈতিক সম্পর্কে। এ এক অনিবার্য পরিণতি, যখন দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও যোগাযোগের ঘাটতি তৈরি হয়।
বিশ্বাস, সম্মান ও আলাপ—এই ত্রয়ী সম্পর্কের মূল ভিত্তি
একটি সুস্থ দাম্পত্য জীবনের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো—পারস্পরিক বিশ্বাস, একে অপরের প্রতি সম্মান, এবং খোলামেলা আলোচনা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই তিনটির অভাব থেকেই সম্পর্কের ফাটল শুরু হয়। আর এই ফাটল কখনো কখনো রূপ নেয় পরকীয়ার মতো অন্ধকার অধ্যায়ে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, স্ত্রীর আচরণে তিনটি লক্ষণ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়:
১. আচরণে আকস্মিক গোপনীয়তা ও পরিবর্তন
যদি স্ত্রী হঠাৎ করেই অনেক বেশি গোপনীয় হয়ে পড়েন, ফোন ব্যবহার নিয়ে অতিরিক্ত সাবধানতা দেখান, আপনার সামনে অস্বস্তিকর আচরণ করেন বা কথাবার্তার ধরন বদলে যায়—তবে তা মানসিকভাবে অন্য কারো সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত হতে পারে।
২. সময় না দেওয়া ও ব্যস্ততার অজুহাত
প্রায়শই অফিসের বাড়তি কাজ, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, অথবা বাসায় থেকেও মানসিকভাবে অনুপস্থিত থাকা—এমন আচরণ অন্য কারো প্রতি আগ্রহের প্রতিফলন হতে পারে।
৩. সাজসজ্জা ও ব্যক্তিত্বে হঠাৎ মনোযোগ
আগের তুলনায় হঠাৎ পোশাক-আশাকে অতিরিক্ত সচেতনতা, সৌন্দর্যচর্চায় মনোযোগ বৃদ্ধি কিংবা নিজেকে উপস্থাপনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন—এগুলোও হতে পারে নতুন কারো প্রতি আকর্ষণের ইঙ্গিত।
তবে সতর্কতা মানেই সন্দেহ নয়
এই লক্ষণগুলো দেখা মানেই যে স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়েছেন, তা বলা ভুল হবে। একপেশে সিদ্ধান্ত সম্পর্কের জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে। বরং প্রয়োজন, আন্তরিক ও সহানুভূতিশীলভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা। প্রয়োজন হলে দাম্পত্য পরামর্শ (Couples Therapy) গ্রহণ করাও হতে পারে একটি কার্যকর পথ।
পরকীয়া কোনো তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনা নয়; বরং এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে—সমঝোতার অভাব, মানসিক দূরত্ব, ভালোবাসার ঘাটতি ও অব্যক্ত কষ্টের ফলস্বরূপ। সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে হলে চাই সময় দেওয়া, বোঝার চেষ্টা করা এবং প্রতিদিন নতুন করে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন