রোহিঙ্গাদের সাগরে ফেলে দেওয়ার ভয়াবহ অভিযোগ: ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের উদ্বেগ
দিল্লি থেকে আটক করে আন্দামান সাগরে ফেলে দেওয়া হয় ৪০ রোহিঙ্গাকে
ভারত সরকারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়ার ভয়ানক অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস। সংস্থাটি জানিয়েছে, নয়াদিল্লি থেকে আটক করা ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জোরপূর্বক বঙ্গোপসাগরের আন্দামান উপকূলে নিয়ে গিয়ে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুজ এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে শরণার্থীদের সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার ঘটনা অমানবিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে এর জবাবদিহির আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঘটনার বিবরণ
গত ৬ মে নয়াদিল্লি থেকে ভারতীয় পুলিশ রোহিঙ্গাদের একটি দলকে আটক করে। পরে চোখ বেঁধে তাদের প্রায় ১,৫০০ মাইল দূরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তাদের তুলে বঙ্গোপসাগরের তানিনথারি উপকূলের দিকে যাত্রা করে।
জাহাজে থাকা রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, সমুদ্রের মাঝপথে তাদের লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে জাহাজ থেকে সাগরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করা হয়। সৈন্যরা তাদের নির্দেশ দেয়—সাঁতরে মিয়ানমারের এক দ্বীপে চলে যেতে। ভাগ্যক্রমে ৪০ জনের সবাই জীবিত অবস্থায় তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে জানিয়েছেন, ভারতীয় বাহিনীর সদস্যরা তাদের মারধর করে এবং দীর্ঘ সময় না খাইয়ে রাখে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে কিশোর, বৃদ্ধ এবং এমনকি ক্যানসার রোগীও ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (PUCL)।
ভারতের অবস্থান ও পূর্বের কর্মকাণ্ড
ভারত সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে “অবৈধ অনুপ্রবেশকারী” হিসেবে বিবেচনা করে, কারণ দেশটির আইনে শরণার্থীর স্বীকৃতি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই দাবি করা হয় যে, রোহিঙ্গারা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং সন্ত্রাসবাদে জড়িত।
এমন পরিস্থিতিতে ভারত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বারবার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। গত সপ্তাহেই গুজরাট থেকে আটক ৭৮ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের সুন্দরবন সীমান্তে পুশ ইন করে ফেলে যায় ভারতীয় বাহিনী। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের ১০ মে উদ্ধার করে। তাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, গুজরাটে আটকাবস্থায় তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপট
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়স্থল এখন বাংলাদেশ। এদের মধ্যে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা ভারতে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নিয়ে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু ভারত সরকার কখনোই তাদের আইনগত স্বীকৃতি দেয়নি।
এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও শরণার্থী সুরক্ষা নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক মহলে চাপ বাড়ছে ভারতের ওপর, যেন মানবিকতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আচরণ করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন