ব্রেকিং নিউজ

ছেলে থাকেন ঢাকায়, মায়ের পোকা ধরা লাশ মিলল ঘরে

 

নিঃসঙ্গতার শেষ পরিণতি: বদরগঞ্জে এক বৃদ্ধার নিথর দেহ উদ্ধার

রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার মাস্টারপাড়া গ্রামে একচালা টিনের ঘরের নীরব এক কোণে বছর পাঁচেক ধরে একাকী জীবন কাটাচ্ছিলেন ঊর্মিলি বেগম (৬০)। স্বামী তোজাম্মেল হোসেন বহু আগেই নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। একমাত্র ছেলে ঢাকায় থাকেন। বৃদ্ধা মা ছিলেন একা—নিজ হাতে রান্না করে খেতেন, কারও সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না। প্রতিবেশীরা কিংবা আত্মীয়স্বজনও তেমন খোঁজ নিতেন না তাঁর।

কখনো-কখনো গ্রামে অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও বয়সের ভারে তা আর সম্ভব ছিল না। ছেলেই ছিলেন তাঁর একমাত্র ভরসা—প্রতি মাসে দুই-আড়াই হাজার টাকা পাঠাতেন, সে টাকাতেই চলত তাঁর দিন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয়রা দরজা ভেঙে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেন। প্রতিবেশীরা জানান, গতকাল বুধবার বিকেল থেকেই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। রাত পেরোতেই গন্ধ আরও তীব্র হয়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে আজ দুপুরে কয়েকজন প্রতিবেশী ঘরের সামনে গিয়ে নিশ্চিত হন, ভেতরেই কিছু একটা ঘটেছে। কাঠের দরজাটি ভেতর থেকে আটকানো ছিল। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে খাটের ওপরে পচে যাওয়া, পোকায় ধরা নিথর দেহ দেখতে পান তাঁরা।

প্রতিবেশী রেজাউল ইসলাম ও তহমিনা বেগম বলেন, ঊর্মিলি বেগম নিঃসঙ্গতায় ডুবে ছিলেন। দিনের বেশিরভাগ সময় তিনি ঘরের আশপাশে একা বসে থাকতেন, কারও সঙ্গে সেভাবে কথা বলতেন না। কখনো বিড়বিড় করে নিজের সঙ্গেই কথা বলতেন। সন্ধ্যা নামলেই শুয়ে পড়তেন। আত্মীয়দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ছিল অনেকটা ছিন্ন।

তাঁর মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় কেউ বলতে পারেননি। প্রতিবেশী তহমিনা বেগম জানান, সর্বশেষ গত রোববার দুপুরে তিনি ঊর্মিলিকে একা বসে থাকতে দেখেছিলেন। এরপর আর তাঁকে দেখা যায়নি।

স্থানীয় রেজাউল করিম বলেন, “লাশ পচে দুর্গন্ধ না ছড়ালে আমরা বুঝতেই পারতাম না, তিনি আর নেই। আমাদের ধারণা, তিনি স্বাভাবিকভাবেই ঘরের ভেতরেই মারা গেছেন।”

ঊর্মিলির একমাত্র ছেলে আনারুল ইসলাম ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি জানান, তাঁর মা একা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বাবার সঙ্গেও তাঁর বা মায়ের যোগাযোগ ছিল না। প্রতিমাসে নিয়ম করে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিতেন, মা তাতেই চলতেন।

মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে আজ দুপুরে আনারুল ঢাকার বাসা থেকে বদরগঞ্জের পথে রওনা হন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, “মা একা থাকতে চাইতেন, আমি তাই খুব একটা বাধা দিইনি। মাসে যা পারতাম, পাঠিয়ে দিতাম।”

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিকভাবে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু। ধারণা করা হচ্ছে, চার-পাঁচ দিন আগে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ছেলে আসার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Choose Your Language