ঢাকা, ১৬ এপ্রিল: দীর্ঘ দেড় দশক পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ২০১০ সালের পর এটিই দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠক। বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বহু বছর ধরে ‘ডিপ ফ্রিজে’ থাকা দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে স্বাধীনতা-পূর্ব সম্পদ বিতরণ, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবর্তন, ১৯৭১ সালের গণহত্যা স্বীকৃতি এবং দোষীদের বিচারের মতো দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো।
সরকারি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছে। গত আগস্টে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং তাকে আনুষ্ঠানিক সফরের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে ‘প্রো-বাংলাদেশ’। দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে যেকোনো সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা আগ্রহী।”
বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরাও। সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, “১৫ বছর পর দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়াটাই বড় অর্জন। এটি ভবিষ্যতের পথ সুগম করতে পারে।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা ও বিনিয়োগে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।”
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সব অমীমাংসিত বিষয় এক বৈঠকে মীমাংসা সম্ভব নয়। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর মনে করেন, “যদি পাকিস্তান অতীতের বিষয়গুলোর দায় স্বীকার করে যথাযথভাবে দায়িত্ব নেয়, তাহলে অনেক জট খুলে যেতে পারে।”
এদিকে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। সেসময় আলোচনা আরও গভীরে যাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, চীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশল অনেকটাই জটিল হয়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটেও পাকিস্তানের সঙ্গে এই নতুন আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে কিনা, সেটি নির্ভর করছে আগামীকালের বৈঠকে আত্মবিশ্বাস ও আন্তরিকতা কতটা প্রকাশ পায় তার উপর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন