ঢাকা, ১৫ এপ্রিল ২০২৫ — দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে গ্যাসের ‘বৈষম্যমূলক’ মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। মঙ্গলবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাঠানো এক চিঠিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
চিঠিতে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সরাসরি বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদের সহযোগিতা কামনা করে জানান, গ্যাসের নতুন মূল্য কাঠামো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগ পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিডা জানায়, গত ১৩ এপ্রিল বিইআরসি যে নতুন গ্যাসমূল্য নির্ধারণ করেছে, তাতে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের মূল্য ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এতে প্রতি ঘনমিটারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে, যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সামিট ২০২৫’-এ ৪০টি দেশের প্রায় ৪৫০ জন বিনিয়োগকারী অংশ নেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অনেকেই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরও করেছেন। তবে বিনিয়োগ সম্মেলনের ঠিক পরেই গ্যাসের এই বৈষম্যমূলক মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় তাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিডা চেয়ারম্যান।
বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ জানিয়েছেন, যদিও তিনি বিডার চিঠির বিষয়ে অবগত, সেটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে পৌঁছায়নি। তবে তিনি বলেন, “বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নির্ধারিত গ্যাসমূল্য পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তারপরও বিডা চেয়ারম্যানের অনুরোধ কমিশনের সভায় আলোচনা করে বিবেচনা করা হবে।”
এদিকে গ্যাসমূল্য বৃদ্ধির পরপরই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (FICCI) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (EuroCham) পৃথক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
FICCI জানায়, “নতুন গ্যাসমূল্য কাঠামো শিল্প খাতে অনিচ্ছাকৃত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।” অন্যদিকে EuroCham বলেছে, “চুক্তিভিত্তিক সময়সীমা এবং সংযোগ স্থিতির ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন শুল্ক নির্ধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও শিল্প প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে।”
বিডা স্পষ্ট করে জানায়, সরকার ভর্তুকি কমাতে চাইলে, সেটি তারা সমর্থন করে, তবে তা যেন সার্বজনীন হয় এবং কোনো পক্ষ বৈষম্যের শিকার না হয়—এই বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন