ঢাকা, ১৭ এপ্রিল:
ছয় দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কারিগরি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা শেষে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াছমিন।
বৈঠক শেষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের আলোচনায় আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। তাই আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যাব।”
আরেক ছাত্র প্রতিনিধি জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, “আমাদের আন্দোলন চলছে আট মাস ধরে। আমরা কাউকে কষ্ট দিতে চাই না, কিন্তু আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। আজকের বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা থাকার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। অতিরিক্ত সচিব নিজেও এ তথ্য জানতেন না। এটা আমাদের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা।”
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি:
১. ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল:
হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিল করতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
-
কারিকুলাম সংস্কার:
বয়সভিত্তিক ভর্তির সুযোগ বাতিল, উন্নত বিশ্ব অনুকরণে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু এবং একাডেমিক কার্যক্রম ইংরেজি মাধ্যমে চালুর দাবি। -
সরকারি নিয়োগে বৈষম্য রোধ:
উপসহকারী প্রকৌশলী পদের শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ডিপ্লোমাধারীদের উপেক্ষা করায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান। -
কারিগরি ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া নিয়োগ বন্ধ:
কারিগরি শিক্ষায় অপ্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করা এবং এসব পদে কারিগরি শিক্ষিতদের নিয়োগ নিশ্চিত করা। -
স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় ও সংস্কার কমিশন:
‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠনের দাবি। -
উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ:
টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডুয়েটের অধীনে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করার দাবি।
সড়ক থেকে রেলপথে, আন্দোলনের বিস্তার
এর আগে, গতকাল (বুধবার) তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলায় সড়ক অবরোধে অংশ নেন তারা। বিকেলে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে পদোন্নতিতে ‘ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের’ কোটা থাকবে না বলে আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেননি।
পরবর্তীতে, আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে রেলপথ অবরোধ এবং অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তবে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের আশ্বাসে কর্মসূচি শিথিল করে তারা আলোচনায় অংশ নেন।
চলমান আন্দোলনের ভবিষ্যৎ
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। একইসঙ্গে জনদুর্ভোগ যতটা সম্ভব কমিয়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন