ব্রেকিং নিউজ

ট্রেনের নিচে ঝাঁপ, সেই বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে যা জানা গেল


রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক বৃদ্ধ। গত ১৪ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। ঘটনার পর তার আত্মহত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

বৃদ্ধ রুহুল আমিন (৬০) ছিলেন বাউসা ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তার আত্মহত্যার কারণ নিয়ে নানা গুঞ্জন ও জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে তার পরিবার দাবি করেছে, তার মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

রুহুল আমিনের ছেলে মীর মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, “আমার বাবা কিছুটা মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি ছিলেন একরোখা প্রকৃতির—ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, তিনি কারো কথা শুনতেন না, যা মনে চাইত তাই করতেন। ঘটনার দিন তিনি আড়ানী স্টেশন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়েছিলেন। এমনকি পেঁয়াজ ঢাকার জন্য পলিথিনও কিনেছিলেন, যা পরে তার মরদেহের পাশে পাওয়া যায়।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “বাবার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। কেউ লিখেছেন, তাকে না খাইয়ে রাখা হতো, পুত্রবধূ নির্যাতন করত, কিংবা মেয়ে খোঁজ নিত না—এসবই ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে, আমরা দুই ভাইবোন। আমার বড় বোন মৌসুমী আক্তার প্রায় ২০ বছর আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে বিয়ে হয়ে সেখানে বসবাস করছেন। আমি কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকি। আমরা নিয়মিতই বাবা-মায়ের খোঁজ রাখতাম। যারা এইসব গুজব ছড়াচ্ছেন, তারা সত্য না জেনে ভুল তথ্য প্রচার করছেন।”

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক এনামুল হক বলেন, “রুহুল আমিন ছিলেন সহজ-সরল, কম কথা বলা একজন মানুষ। তবে কিছুটা জেদি ছিলেন। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন, যা একদমই ঠিক নয়। আগে সঠিক তথ্য যাচাই করা উচিত, তারপর কিছু বলা। এসব কারণে পরিবারকে অপমানের মুখে পড়তে হয়।”

বাউসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলী মলিন বলেন, “রুহুল আমিন একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। পরিবার হিসেবে তারা খুবই ভালো। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে, উভয়ে স্ব স্ব অবস্থানে আছেন। যতদূর জানি, সন্তানরা নিয়মিতই বাবা-মায়ের খোঁজখবর রাখতেন, সে বিষয়ে কোনো সমস্যা ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “রুহুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে কোমর ও পায়ের ব্যথায় ভুগছিলেন। বয়সজনিত কারণে শারীরিক জটিলতা থাকা স্বাভাবিক। এছাড়া তার কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। আর্থিকভাবে তারা কষ্টে ছিলেন না, তবে ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। থাকলেও সেটা খুব বড় অঙ্ক হওয়ার কথা নয়।”

ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, “রুহুল আমিন বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় ২-৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি সেই টাকা দিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন, তবে আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় লোকসানে পড়েন। সম্ভবত সেই আর্থিক ক্ষতি এবং শারীরিক অসুস্থতা থেকে মানসিক চাপে ছিলেন। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে।”

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Choose Your Language