মস্কো, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ — পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতির বিষয়ে রাশিয়াকে অবহিত করতে মস্কো সফর করছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একটি বার্তা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খামেনির পাঠানো চিঠিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান পারমাণবিক আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ওমানে এই দুই দেশের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয়পক্ষই আলোচনাকে "গঠনমূলক ও ইতিবাচক" হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে ইতালির রোমে দ্বিতীয় দফা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল ও তেহরানের জবাব
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মেয়াদের শুরু থেকেই ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল প্রয়োগ করেন। এর লক্ষ্য ছিল ইরানের তেল রফতানি বন্ধ করে দেয়া এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করা। কিন্তু ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধে অনড় অবস্থানে রয়েছে এবং বরাবরই বলেছে, এটি তাদের সার্বভৌম অধিকার।
গত মাসে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো চুক্তি না হলে, ইরানের ওপর বোমা হামলা চালানো এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
রাশিয়ার অবস্থান
রাশিয়া, ইরানের দীর্ঘদিনের মিত্র, এই ধরনের সামরিক হুমকিকে ‘অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, মস্কো ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতা অব্যাহত রাখবে। উল্লেখ্য, রাশিয়া ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শঙ্কা
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) সম্প্রতি জানিয়েছে, ইরান ৬০% মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০%-এর কাছাকাছি। সংস্থাটির মতে, ইরান ইতোমধ্যে ৪২ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করেছে, যা একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
IAEA প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ফরাসি দৈনিক লে মন্ডে-কে বলেন, “ইরান এখন পারমাণবিক বোমা তৈরির খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, তেহরানের কিছু পারমাণবিক স্থাপনায় পরিদর্শনের সুযোগ না পাওয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
পশ্চিমাদের উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা করছে, ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে তা শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে। যদিও তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
উপসংহার
বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বিশ্লেষকরা। মস্কোর মধ্যস্থতায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন