নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ভিন্নমত এনসিপির, জোর দিচ্ছে সংস্কার ও বিচারের ওপর



ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ — আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন চায় চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই। একইসঙ্গে জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সময়সূচি নিয়ে সরকারের প্রস্তাবিত সীমানার মধ্যেই অবস্থান করছে।

তবে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের ধারায় জন্ম নেয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই ইস্যুতে ভিন্ন সুর তুলেছে। দলটি জানিয়েছে, সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি বিচার ও প্রশাসনিক সংস্কার নিশ্চিত করা না হয়, তবে তারা নির্বাচনের পক্ষে নয়।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “সরকারের তরফ থেকে বিচার ও সংস্কারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ থাকলে এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। শুধু নির্বাচনের তারিখ দিয়ে বিএনপি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না।”

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “জনপ্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার না হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি সম্ভব নয়। তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনও ব্যাহত হবে।”

এদিকে, নির্বাচন সংক্রান্ত সময়সীমা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিএনপির দেয়া প্রস্তাব নিয়েও মত দিয়েছেন এনসিপির নেতারা। আখতার হোসেন বলেন, “রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি জানানো বিএনপির অধিকার। তবে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য কিংবা জনগণ তা কতটা সমর্থন করছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র যদি পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়, তাহলে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা রয়েছে।”

সারোয়ার তুষার আরও বলেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তার দায় বিএনপিকেই নিতে হবে। তারা রোডম্যাপ নয়, বরং ডেডলাইন চাইছে—এটা দলীয় এজেন্ডাকে জাতীয় ইস্যুর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা।”

এনসিপিকে ঘিরে আরেকটি বিতর্ক উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে। বিশেষ করে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে এনসিপির দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির অবস্থান নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে দলটির নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এতে তারা কোনও বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন না।

আখতার হোসেন বলেন, “এই সরকারে সব দলই তাদের প্রাপ্য অংশ পেয়েছে। এনসিপির জন্য আলাদা কোনো সুবিধা দেয়া হয়নি। আমরা কারো আনুকূল্য পাইনি।”

অন্যদিকে সারোয়ার তুষার অভিযোগ করেন, “প্রশাসনের অধিকাংশ অংশ বিএনপি এবং জামায়াতপন্থী হয়ে গেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপিপন্থীরা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে আছে।”

এনসিপির পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে, দলটি নির্বাচন চায়। তবে তা অবশ্যই সংস্কারের মাধ্যমে গণআন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে হতে হবে। তা না হলে দেশের গণতন্ত্র নতুন করে সংকটে পড়বে বলেই আশঙ্কা তাদের।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Choose Your Language