নয়াদিল্লি/ইসলামাবাদ, ২৪ এপ্রিল: ছয় দশকের পুরনো সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। কাশ্মিরের পেহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে। এই পদক্ষেপ দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও ঘনীভূত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
চুক্তির প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী, রাভি, বিয়াস ও সুতলেজ নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার ভারতের এবং সিন্ধু, ঝিলম ও চিনাব নদীর পানি পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত হয়। ভারত উজানের দেশ হিসেবে পশ্চিমের নদীগুলোর পানি সীমিত পরিমাণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচের জন্য ব্যবহার করতে পারলেও, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে কোনো বাধা দেওয়ার অনুমতি ছিল না।
এই নদীগুলো পাকিস্তানের কৃষি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির সেচ ব্যবস্থা এই পানির ওপর নির্ভরশীল এবং অর্থনীতির ২১ শতাংশই কৃষিনির্ভর।
ভারতের নতুন অবস্থান
নয়াদিল্লি এখন বলছে, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়নের স্বার্থে চুক্তি পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। যদিও বর্তমানে ভারত যে নদীগুলো ব্যবহার করে, সেখানে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার মতো বড় বাঁধ বা অবকাঠামো নেই। তবুও শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ হ্রাস পাকিস্তানের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের সেচব্যবস্থায় সামান্য পরিবর্তনও বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। নদীর পানি প্রবাহ ব্যাহত হলে পাকিস্তানে স্থিতিশীলতা ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
পাকিস্তান আগেই সতর্ক করেছিল, সিন্ধুর পানির প্রবাহ ব্যাহত হলে তা যুদ্ধের পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে। অতীতেও ভারত বিভিন্ন বাঁধ প্রকল্পে আন্তর্জাতিক বিধান লঙ্ঘনের চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ করে আসছে ইসলামাবাদ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যদি কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হয়, তবে তা নিয়ে আলোচনার পথ খোলা থাকবে; তবে স্থায়ী সিদ্ধান্ত হলে তা অঞ্চলজুড়ে জটিলতা বাড়াবে।
একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
সিন্ধু পানি চুক্তি এতদিন দক্ষিণ এশিয়ায় পানি বণ্টনের একমাত্র কার্যকর আন্তর্জাতিক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হতো। এটি প্রথমবারের মতো এমনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলো, যা আগামী দিনগুলোতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের গতিপথকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন সময় এসেছে দুই দেশ কূটনৈতিক টেবিলে ফিরবে, না কি আরও সংঘাতের পথে যাবে—তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটা স্পষ্ট, পানির প্রবাহ কেবল নদীতেই নয়, প্রবাহিত হচ্ছে রাজনীতির কেন্দ্রেও।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন