কক্সবাজার, ৯ এপ্রিল: প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক টিম বা ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সমুদ্রপথে স্পিডবোটে যাত্রা করেছিলেন কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। তবে ভাগ্যের এক অপূর্ব পরিহাসে, মাঝসমুদ্রেই প্রসববেদনা শুরু হয়। সৌভাগ্যবশত বোটে তখন ছিলেন এক চিকিৎসক—ডা. সৈকত বড়ুয়া। তার তাৎক্ষণিক সহায়তায়ই সমুদ্রপাড়েই স্পিডবোটের মধ্যে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে নবজাতক।
ঘটনার বিবরণ
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ঘাটের কাছে ঘটনার সূত্রপাত। হাইরিস্ক প্রেগন্যান্সি হওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়। যথাযথ প্যারামেডিক বা স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াই তাকে নিয়ে স্পিডবোটে রওনা হন স্বজনরা।
স্পিডবোটে থাকা ডা. সৈকত বড়ুয়া, যিনি দাফতরিক কাজ শেষে মহেশখালী ফিরছিলেন, জানান—তিনি শুরুতে জানতেনই না যে একই বোটে একজন গর্ভবতী রোগী রয়েছেন। হঠাৎ করেই প্রসববেদনায় কাতর মায়ের চিৎকার এবং দাই মায়ের সাড়া-চিৎকারে তিনি ঘটনা আঁচ করতে পারেন।
জরুরি চিকিৎসা বোটেই
তড়িঘড়ি করে বোটটিকে মগনামা ঘাটের কাছে ভেড়ানোর নির্দেশ দেন ডা. সৈকত। যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে দাই মা ও তিনি মিলে বোটেই প্রসব করান। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকলেও হাতের কাছে থাকা কাথা-কাপড় দিয়েই নবজাতকের সেবা, কর্ড কাটা, ভাইটালস পর্যবেক্ষণসহ সব জরুরি কাজ সম্পন্ন করেন তিনি। নবজাতকের জন্মের পর মা ও সন্তানকে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চিকিৎসকের আবেদন
ডা. সৈকত বড়ুয়া বলেন, “এটি কাকতালীয়ভাবে একটি সৌভাগ্যজনক ঘটনা হলেও, একই রকম বিপজ্জনক পরিস্থিতি যে কোনও সময় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।” তিনি দ্বীপ ও উপকূলীয় এলাকার রোগীদের জন্য ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স ও প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক টিম নিশ্চিত করার দাবি জানান।
স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার দরকার
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, দ্বীপ অঞ্চলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও সীমাবদ্ধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন