গেঁটেবাতে ভুগছেন? জেনে নিন কী করবেন


গেঁটেবাত: ‘রাজাদের রোগ’ নিয়ন্ত্রণে যা জানা জরুরি

গেঁটেবাত হলো এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস, যা শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিকের কারণে ঘটে। এটি সাধারণত পা-এর বুড়ো আঙুলে শুরু হলেও শরীরের অন্যান্য জয়েন্টেও প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে এই রোগ দেখা দেয় এবং পুরুষদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি।

‘রাজাদের রোগ’ কেন বলা হয়?

ঐতিহাসিকভাবে গেঁটেবাতকে ‘রাজাদের রোগ’ বলা হতো, কারণ এটি মূলত সেইসব মানুষদের মধ্যে দেখা যেত যারা অতিরিক্ত মাংস ও অ্যালকোহল গ্রহণ করতেন—যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।

গেঁটেবাতের কারণসমূহ

গেঁটেবাতের নির্দিষ্ট কোনো একক কারণ নেই, তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে:

  • উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার (যেমন লাল মাংস, সামুদ্রিক খাবার, অর্গান মিট)

  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন

  • পানি কম খাওয়া (ডিহাইড্রেশন)

  • দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ

  • অ্যাসপিরিন ও মূত্রবর্ধক ওষুধ

  • বংশগত কারণ

গেঁটেবাত নিয়ন্ত্রণের উপায়

গেঁটেবাত সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও ওষুধ ও জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিচে কিছু কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হলো:

✅ চিকিৎসা মেনে চলুন

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত অ্যালোপিউরিনল গ্রহণ করুন।

  • এটি ব্যথা না কমালেও দীর্ঘমেয়াদে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে আক্রমণ প্রতিরোধ করে।

✅ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন

  • লাল মাংস, অর্গান মিট, গ্রেভি ও সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলুন।

  • বেশি করে খান: শাকসবজি, গোটা শস্য, তাজা ফল এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার।

✅ হাইড্রেটেড থাকুন

  • প্রতিদিন অন্তত ২–৩ লিটার পানি পান করুন, যাতে ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক আকারে জমতে না পারে।

✅ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

  • ধ্যান, হালকা ব্যায়াম ও পছন্দের শখ আপনাকে চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।

✅ ওষুধ গ্রহণে সচেতনতা

  • অ্যাসপিরিন বা ডায়ুরেটিকস (যদি না একান্ত প্রয়োজন হয়) এড়িয়ে চলুন বা চিকিৎসকের পরামর্শে বিকল্প গ্রহণ করুন।

✅ স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন

  • ধীরে ধীরে ওজন কমানো জয়েন্টের ওপর চাপ কমায় ও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

✅ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

  • যদি ব্যথা বাড়তে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা (যেমন: জয়েন্টের এক্স-রে বা ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা) করান।


শেষ কথা

গেঁটেবাত নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত চিকিৎসা অনুসরণই প্রধান চাবিকাঠি। সামান্য অবহেলায় এটি জয়েন্টের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই জীবনযাপন হোক সুশৃঙ্খল, গেঁটেবাত থাকুক নিয়ন্ত্রণে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Choose Your Language