গাজার ১০ লাখ অধিবাসীকে লিবিয়া পাঠানোর যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা: বিতর্ক, প্রত্যাখ্যান ও বাস্তবতা
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র গাজার অন্তত ১০ লাখ অধিবাসীকে লিবিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। খবর অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিনামূল্যে ঘর ও আর্থিক সহায়তার কথাও বলা হয়েছে।
পরিকল্পনার পেছনের কৌশল:
সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়—
-
যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ান সরকারকে প্রলুব্ধ করছে যে, যদি তারা গাজার মানুষদের স্থায়ীভাবে গ্রহণ করে, তবে ওয়াশিংটন ২০১১ সালে জব্দ করা লিবিয়ার বিপুল পরিমাণ সম্পদ ফেরত দেবে।
-
ইসরায়েলও এই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে চুক্তি হয়নি
তবে এনবিসির সূত্রগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পনা এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে এবং কোনও চুক্তিতে পৌঁছায়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের একজন মুখপাত্র এই খবরকে "বাস্তবসম্মত নয়" এবং "আলোচনার বাইরে" বলে উল্লেখ করেছেন।
হামাসের জবাব:
গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এই পরিকল্পনার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, তারা এ ধরনের কোনো আলোচনা সম্পর্কে জানে না। হামাস নেতা বাসিম নাঈম বলেন—
“ফিলিস্তিনিরা নিজেদের মাতৃভূমি ছাড়বে না। তাদের ভাগ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র তাদেরই রয়েছে।”
লিবিয়ার বাস্তবতা:
লিবিয়া নিজেই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত ও রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে বর্তমানে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার বিরাজমান। এই অবস্থায় বিপুল সংখ্যক গাজার মানুষকে সেখানে স্থানান্তরের ধারণা বাস্তবতাবিবর্জিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনেকেই মনে করছেন।
✍️ বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া:
-
এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, এবং স্বজাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।
-
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই প্রচেষ্টা যদি সত্যও হয়, তবে তা ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুতি বৈধ ও স্থায়ী করার একটি চেষ্টামাত্র।
-
আবার এটিকে কেউ কেউ ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদী অংশ হিসেবেও দেখছেন, যাতে গাজার ভৌগোলিক কাঠামো পুরোপুরি বদলে দেওয়া হয়।
✅ সারসংক্ষেপে:
এই মুহূর্তে গাজার জনগণকে লিবিয়ায় পাঠানোর বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত বা চুক্তি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের একাংশে এমন প্রস্তাব বা আলোচনা হতে পারে, তবে তা এখনো অসত্যায়িত ও অপারিপক্ব পর্যায়ে রয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধ ও স্বাধিকার চেতনা, এবং লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা—এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলেই ধারণা করা যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন