পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিবের: “পররাষ্ট্রনীতি এখন প্রো-বাংলাদেশপন্থী”



ঢাকা, ১৮ এপ্রিল: পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়ে উদ্ভূত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি প্রো-বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে, যা কেবলমাত্র দেশের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবে।”

আজাদের এই মন্তব্য আসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের ঢাকা সফর ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরপরই।

ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে ব্যাখ্যা

আজাদ মজুমদার তার পোস্টে লেখেন, "পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কি পাকিস্তানপন্থী হয়ে যাচ্ছে? এ প্রশ্ন আমাদের অবাক করেনি। এমন কিছু মানুষ সব সময়ই থাকবে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়ে সন্দেহ পোষণ করে।”

তিনি বলেন, “ইতিহাসে অনেক উদাহরণ আছে যেখানে দীর্ঘদিনের শত্রুরা পরে মিত্রে পরিণত হয়েছে। ফ্রান্স-ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র-জাপান তার প্রমাণ।”

১৯৭১, সম্পদ বিভাজন ও ক্ষমা প্রার্থনা প্রসঙ্গ

আজাদ মজুমদার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা না করাই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বড় বাধা। যদিও পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ এ ধরনের ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে ছিলেন, তবে দেশটির সরকার ও সামরিক প্রশাসন সবসময় তা অস্বীকার করেছে।

তিনি আরও বলেন, “১৯৭৪ সালের একটি অনুমিত হিসাব অনুযায়ী পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৪৩২ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ত্রাণের জন্য প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক অনুদান থেকেও বাংলাদেশ এখনও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করছে।”

আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রসঙ্গ

আজাদ জানান, পাকিস্তান এক সময় ১ লাখ ২৫ হাজার নাগরিক ফিরিয়ে নিলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন শিবিরে এখনো প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার পাকিস্তানি আটকে রয়েছে, যা সম্পর্ক উন্নয়নের পথে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা।

“একতরফা নয়, ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি”

আজাদ মজুমদার বলেন, “এক প্রতিবেশীকে খুশি রাখতে গিয়ে আরেকজনের সঙ্গে দূরত্ব— এটা স্বাধীন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না।”

তিনি জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর কথা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে এবং পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করার সম্মতি দিয়েছে।

আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান

শেষে তিনি বলেন, “এখন সময় এসেছে অতীতের জটিল বিষয়গুলো সমাধান করে একটি সুস্থ, পরিপক্ব ও ভবিষ্যতমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার। অন্তর্বর্তী সরকার সেই পথেই এগোচ্ছে।”

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Choose Your Language