রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন গতি: মিয়ানমার ১.৮ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার ঘোষণা



ঢাকা, ৬ এপ্রিল ২০২৫:

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বড় পদক্ষেপের পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। গত শুক্রবার মিয়ানমার সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তারা ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানা গেছে। যাচাই শেষে তাদেরকেও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।


বিশ্লেষকরা এটিকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।


উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ভয়াবহ সহিংসতা ও গণহত্যার প্রেক্ষিতে লাখো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আট লাখ রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমার সরকারের কাছে ছয় দফায় হস্তান্তর করে।


এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, "রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। শুরুতে এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা ছিল সরকারের দায়িত্ব। এখন ধাপে ধাপে ফলাফল আসতে শুরু করেছে। মিয়ানমার যে তালিকা স্বীকার করেছে, সেটি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।"


যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন বলেন, “মিয়ানমারের এই স্বীকৃতি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি এক ধরনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও।”


সম্প্রতি চীন সফরকালে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের আরও সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা করার আশ্বাস দেন। সফরের কয়েকদিনের মধ্যেই মিয়ানমার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকরা চীনের কূটনৈতিক চাপের ফলাফল হিসেবে দেখছেন।


নাঈম আশফাক চৌধুরী আরও বলেন, “চীন যত বেশি চাপ প্রয়োগ করবে, মিয়ানমার ততটাই নমনীয় হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে পারলে পরবর্তী সরকারও বিষয়টিকে চালিয়ে নিতে বাধ্য হবে।”


তবে এই স্বীকৃতির বাস্তবায়ন এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষ এবং রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।


আকবর হোসেন জানান, “রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি মিয়ানমারের একটি অংশ — আরাকান আর্মিকে — অসন্তুষ্ট করতে পারে। বাংলাদেশ ও আরাকান আর্মির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সমন্বয়ের ওপর বিষয়টির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একই সঙ্গে ভারত ও চীনের ভূরাজনৈতিক ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।”


উল্লেখ্য, এর আগেও কয়েক দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন এবং কূটনৈতিক মহলে আশাবাদও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Choose Your Language